হাদীস পড়ুন সুন্দর জীবন গড়ুন
Friday, 23 September 2016
আমরা ভুলে যাই।
ভাগ্য তোমার হাতে নেই, কিন্তু সিদ্ধান্ত তোমার হাতে। ভাগ্য সিদ্ধান্ত নেয় না, কিন্তু তোমার সিদ্ধান্তই তোমাকে ভাগ্য এনে দিতে পারে৷
https://m.facebook.com/ReadTheHadithOrCreateABeautifulLife/
Saturday, 13 February 2016
ভালবাসা দিবস কেন বর্জন করব ?
যে কোনো দিবসকে আমরা গ্রহণ করব না বর্জন করব,
সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রধানত দুটো বিষয়
বিবেচনা করা উচিৎ ।
#এক . দিবসটার সাথে ধর্মীয় কোনো চেতনা জড়িত
কিনা । থাকলে তা ইসলামের বিরুদ্ধে নাকি পক্ষে।
পক্ষে হলে তার প্রমাণ রাসূল স. বা তাঁর
সাহাবীদের থেকে আছে কিনা ।
#দুই . দিবসটি পালনে ইসলাম বিরোধী কিছু হচ্ছে
কিনা । হলে সেটা কোন পর্যায়ের ।
ভালবাসা দিবস গ্রহণ-বর্জন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত
নেয়ার আগেও বিষয় দুটি বিবেচনায় আনা যেতে
পারে ।
#প্রথম_বিষয় : দিবসটির সাথে ধর্মীয় চেতনা জড়িত
কিনা ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখি, দিবসটি
জনৈক খ্রীস্টান সাধুর স্মরণে পালন করা হয় । যার
ব্যাপারে কথিত আছে যে, তিনি কারাবন্দী
অবস্থায় একটি মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করায়
তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে হত্যা
করেন । সেই থেকে তাকে স্মরণ করে ভ্যালেন্টাইনস
ডে পালন করা হয় ।
যদিও পরবর্তীতে এতে নষ্টামি যোগ হওয়ায় ১৭৭৬
সালে ফ্রান্স সরকার এই দিনটি পালন নিষিদ্ধ করে ।
পরে আবার অনেকটা করপোরেট জায়গা থেকেই বলা
যায় দিনটি পুনরায় জনপ্রিয়তা ফিরে পায় ।
বর্তমানে দিনটিকে কেন্দ্র করে চলে বিলিয়ন
ডলারের বাণিজ্য ।
( উইকিপিডিয়া http:// en. wiki pedia. org /wiki/
Valentine%27s_Day )
#দ্বিতীয়_বিষয় : দিবসটি পালনে ইসলাম বিরোধী
কিছু হয় কিনা । আমরা জানি বর্তমানে দিবসটিকে
কেন্দ্র করে যেসব বিষয় চলে, তার কোনোটিই
ইসলাম সমর্থন করে না ।
ভালবাসা আদান-প্রদানের নামে তরুণ-তরুণীর
সাক্ষাত, সম্মিলন, কথোপকথন, কনসার্ট, মদ্যপান
এমনকি অবৈধ সংস্পর্শ – কী হয় না দিনটিকে কেন্দ্র
করে । এ দিনটিতে অনেকে তাদের অবৈধ প্রেম
নিবেদন করে । অনেকে অবৈধ উপায়ে নিজের
সতীত্ব নষ্ট করার জন্য দিনটি নির্ধারণ করে ।
এছাড়া উন্নত ক্লাবগুলোতে আরো কী চলে, তা না-
ইবা বলা হলো ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না । নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং
মন্দ পথ ।” (আল-ইসরা: ৩২)
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার অর্থ কাজটির ভূমিকায়
যা কিছু হয় সবকিছু । কথা বলা, সাক্ষাৎ, সম্মিলন,
কনসার্ট, নাচানাচি, গান সবই চলে আসবে। আল্লাহ
এই সবগুলোই নিষেধ করেছেন । আর আল্লাহর নিষেধ
মানে হারাম । কবীরা গুনাহ ।
অবহেলা করে এগুলোতে অংশগ্রহণ করা ঈমান নষ্টের
কারণ হতে পারে । তাওহীদের পরিপন্থী তো বটেই ।
আল্লাহকে এক ইলাহ হিসেবে স্বীকার করে নেয়ার
অর্থ তাঁকেই একমাত্র বিধানদাতা হিসেবে স্বীকার
করে নেয়া । এবং তাঁর যে কোনো বিধান বিনা
প্রশ্নে মেনে নেয়া ।
কেউ যদি বিষয়টিকে অবহেলা করে তাহলে তা
কুফরী হবে । তেমনি কেউ এতে অংশ না নিলে যদি
তাকে ঠাট্টার কেন্দ্রবিন্দু বানানো হয়, তাহলেও তা
কুফরী হবে । কেউ এসবে অংশ নিলে, তাকে সমর্থন
করাটাও কুফরী হবে । একজন মুসলিম নিশ্চয় কুফরী
পছন্দ করতে পারে না ।
এমনিতে দিবসটির পেছনে যে ভালবাসার বাণী
রয়েছে, তাতে ইসলামের কোনো আপত্তি নেই । বরং
ইসলামের পুরো সিস্টেমটাই ভালবাসা ও দয়ার ওপর
প্রতিষ্ঠিত । সে ভালবাসা এক দিনের নয়, নয় এক
বছরের । সে ভালবাসা সারা জীবনের, ক্বিয়ামত
পর্যন্ত ।
আল্লাহ আমাদের এসব জায়গায় সুবিবেচনাপ্রসূত
সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফীক দিন । আমীন । (সংগৃহীত)
##শেয়ার করে সবার কাছে পৌঁছে দিন ইসলামের
শাশ্বত বাণী। হৃদয় থেকে হৃদয় উদ্ভাসিত হোক
ঈমানের আলোকচ্ছটায়।
যে কোনো দিবসকে আমরা গ্রহণ করব না বর্জন করব,
সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রধানত দুটো বিষয়
বিবেচনা করা উচিৎ ।
#এক . দিবসটার সাথে ধর্মীয় কোনো চেতনা জড়িত
কিনা । থাকলে তা ইসলামের বিরুদ্ধে নাকি পক্ষে।
পক্ষে হলে তার প্রমাণ রাসূল স. বা তাঁর
সাহাবীদের থেকে আছে কিনা ।
#দুই . দিবসটি পালনে ইসলাম বিরোধী কিছু হচ্ছে
কিনা । হলে সেটা কোন পর্যায়ের ।
ভালবাসা দিবস গ্রহণ-বর্জন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত
নেয়ার আগেও বিষয় দুটি বিবেচনায় আনা যেতে
পারে ।
#প্রথম_বিষয় : দিবসটির সাথে ধর্মীয় চেতনা জড়িত
কিনা ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখি, দিবসটি
জনৈক খ্রীস্টান সাধুর স্মরণে পালন করা হয় । যার
ব্যাপারে কথিত আছে যে, তিনি কারাবন্দী
অবস্থায় একটি মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করায়
তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে হত্যা
করেন । সেই থেকে তাকে স্মরণ করে ভ্যালেন্টাইনস
ডে পালন করা হয় ।
যদিও পরবর্তীতে এতে নষ্টামি যোগ হওয়ায় ১৭৭৬
সালে ফ্রান্স সরকার এই দিনটি পালন নিষিদ্ধ করে ।
পরে আবার অনেকটা করপোরেট জায়গা থেকেই বলা
যায় দিনটি পুনরায় জনপ্রিয়তা ফিরে পায় ।
বর্তমানে দিনটিকে কেন্দ্র করে চলে বিলিয়ন
ডলারের বাণিজ্য ।
( উইকিপিডিয়া http:// en. wiki pedia. org /wiki/
Valentine%27s_Day )
#দ্বিতীয়_বিষয় : দিবসটি পালনে ইসলাম বিরোধী
কিছু হয় কিনা । আমরা জানি বর্তমানে দিবসটিকে
কেন্দ্র করে যেসব বিষয় চলে, তার কোনোটিই
ইসলাম সমর্থন করে না ।
ভালবাসা আদান-প্রদানের নামে তরুণ-তরুণীর
সাক্ষাত, সম্মিলন, কথোপকথন, কনসার্ট, মদ্যপান
এমনকি অবৈধ সংস্পর্শ – কী হয় না দিনটিকে কেন্দ্র
করে । এ দিনটিতে অনেকে তাদের অবৈধ প্রেম
নিবেদন করে । অনেকে অবৈধ উপায়ে নিজের
সতীত্ব নষ্ট করার জন্য দিনটি নির্ধারণ করে ।
এছাড়া উন্নত ক্লাবগুলোতে আরো কী চলে, তা না-
ইবা বলা হলো ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না । নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং
মন্দ পথ ।” (আল-ইসরা: ৩২)
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার অর্থ কাজটির ভূমিকায়
যা কিছু হয় সবকিছু । কথা বলা, সাক্ষাৎ, সম্মিলন,
কনসার্ট, নাচানাচি, গান সবই চলে আসবে। আল্লাহ
এই সবগুলোই নিষেধ করেছেন । আর আল্লাহর নিষেধ
মানে হারাম । কবীরা গুনাহ ।
অবহেলা করে এগুলোতে অংশগ্রহণ করা ঈমান নষ্টের
কারণ হতে পারে । তাওহীদের পরিপন্থী তো বটেই ।
আল্লাহকে এক ইলাহ হিসেবে স্বীকার করে নেয়ার
অর্থ তাঁকেই একমাত্র বিধানদাতা হিসেবে স্বীকার
করে নেয়া । এবং তাঁর যে কোনো বিধান বিনা
প্রশ্নে মেনে নেয়া ।
কেউ যদি বিষয়টিকে অবহেলা করে তাহলে তা
কুফরী হবে । তেমনি কেউ এতে অংশ না নিলে যদি
তাকে ঠাট্টার কেন্দ্রবিন্দু বানানো হয়, তাহলেও তা
কুফরী হবে । কেউ এসবে অংশ নিলে, তাকে সমর্থন
করাটাও কুফরী হবে । একজন মুসলিম নিশ্চয় কুফরী
পছন্দ করতে পারে না ।
এমনিতে দিবসটির পেছনে যে ভালবাসার বাণী
রয়েছে, তাতে ইসলামের কোনো আপত্তি নেই । বরং
ইসলামের পুরো সিস্টেমটাই ভালবাসা ও দয়ার ওপর
প্রতিষ্ঠিত । সে ভালবাসা এক দিনের নয়, নয় এক
বছরের । সে ভালবাসা সারা জীবনের, ক্বিয়ামত
পর্যন্ত ।
আল্লাহ আমাদের এসব জায়গায় সুবিবেচনাপ্রসূত
সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফীক দিন । আমীন । (সংগৃহীত)
##শেয়ার করে সবার কাছে পৌঁছে দিন ইসলামের
শাশ্বত বাণী। হৃদয় থেকে হৃদয় উদ্ভাসিত হোক
ঈমানের আলোকচ্ছটায়।
Saturday, 6 February 2016
Friday, 5 February 2016
রূপ তুমি কার?
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কাছে রূপ অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে মূল্যায়িত হয়ে আসছে-
সেটা মানুষের বেলায় যা, পশু-পাখি ভালোবাসার
ব্যাপারেও তা। তাইতো কালো বিড়াল দেখলে
মানুষ ভয় পায়, অশুভ ভাবে, কাককে পছন্দ করে এমন
মানুষও মিলবে কিনা সন্দেহ। তাহলে দেখুন মানুষের
বেলায় এই ব্যাপারটি কতখানি গুরুত্ববহ করে তুলেছে
মানুষের গড়া সমাজ ! কালো মেয়ে হলে ভালো
জায়গায় কাজ পেতে কষ্ট হয়, অনেক বান্ধবীর মধ্যে
একজন কম সুন্দরী থাকলে সে ভোগে inferiority
complex এ। আর বিয়ে-শাদির বেলাতে তো কথাই
নেই। সবাই সুন্দরী পরী যায়-না থাকুক তার বিদ্যা
কিংবা ভদ্রতা।
এতো বললাম কেবল মেয়েদের কথা যাদের জন্য যুগ
যুগ ধরে উৎপন্ন হচ্ছে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম, বয়স
বাড়লেও যেন বুড়ো স্বামীর কাছে কিশোরী থাকা
যায়-সে প্রয়াসে wrinkle অপসারণীয় ক্রিম ইত্যাদি।
তবে এখনকার দিনে ছেলেরাও এই নির্মম
নির্যাতনের হাত থেকে ছাড় পাচ্ছে না!! তাই তো
‘ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম’ এর মত পণ্যের প্রসার
ঘটছে !
পুরো বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থাটা এখন এতটাই ঠুনকো!
পশ্চিমা সভ্যতায় গা ভাসিয়ে আমরা এতটাই
বস্তুবাদী হয়ে উঠছি যে অভিব্যক্ত ব্যাপারগুলো
ছাড়া আর কিছু আমাদের মগজে স্থান পায় না-
অবস্থার ভয়াবহতায় তাই আমরা আল্লাহ্কে না দেখে
বিশ্বাস করি না, ফেরেশতাদের না দেখে মানি না,
কুরআনের আয়াতেও নেই আস্থা- পরিণামে আমরা
হয়ে উঠছি ভোতা মানব জাতি- যারা তাদের
দুর্বলতাকে পুঁজি করে পাড়ি দিতে যাচ্ছি অজানা
গন্তব্য- সর্বশিক্তিমানের সাথে দেই পাল্লা!!
রূপের প্রসংগ থেকে ইসলামে চলে আসার পেছনে
একটি কারণ আছে। কিছুদিন আগে একটি শিক্ষামূলক
ভিডিও দেখলাম। ভিডিওটির মূল বক্তব্য ছিল
মানুষের রূপ আল্লাহ্র কাছে মূখ্য নয়- আল্লাহ্র কাছে
বান্দার ঈমান এবং আমলই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে বেশ কয়েকটি হাদীস share করা হয়েছে। তবে
সত্যিকার অর্থে আমি এই হাদিসগুলো থেকে
অনেকগুলো lesson পেয়েছি।
প্রথম হাদীসটি বায়হাকীর। হাদীসটি এরকম যে
রাসূলুল্লাহ্ (স) এর সময়ে যাহ্র (র) নামে একজন
সাহাবী ছিলেন যার মাঝে বাহ্যিক সৌন্দর্য বলতে
কিছুই ছিল না। এই ব্যাপারটি মানুষ অত্যন্ত
বিনম্রভাবে উল্লেখ করত এবং যাহ্র (র)ও নিজেকে
ছোট মনে করতেন। তাই আমাদের প্রিয় নবী (স)
সবসময় চেষ্টা করতেন যেকোন ভাল কাজে যাহ্র (র)
কে উৎসাহিত করার, তাকে সবসময় এই অনুভূতি
প্রদানের যে তিনি (স) যাহ্র (র) কে কত্ত care করেন।
একদিন নবী করীম (স) যাহ্র (র) কে দেখলেন
বাজারে তার পণ্যদ্রব্য বেচতে। তিনি (স)
সাহাবীকে পেছন থেকে জাপটে ধরে মজা করে
বলতে লাগলেন, “কে কিনবে আমার এই দাসটাকে?”
যাহ্র (র) নবীজী (স) এর কন্ঠস্বর শুনে এবং তাঁর
কোমল হাত দেখেই চিনলেন; বুঝলেন আল্লাহ্র রাসূল
(স) তার সাথে মশকরা করছেন। তিনি তাঁকে (স)
বাধা দিলেন না। তবে প্রত্যুত্তরে বললেন, “হে
আল্লাহ্র রাসূল (স), কে আমাকে কিনবে যদিও বা
আমি একজন দাস হতাম?” অর্থাৎ তিনি বোঝালেন
যে তিনি তার চেহারার কারণে মানুষের কাছে
এতটাই অগ্রহণীয় ছিলেন যে মানুষ তাকে দাস
হিসেবেও কিনতে চাইতো না। আমাদের প্রিয় নবী
(স) এতটাই অমায়িক ছিলেন যে তিনি তাঁর হাত-
দুখানা যাহ্র (র) এর কাঁধে রেখে বললেন যে
আল্লাহ্র কাছে যাহ্র (র) এর মূল্য সীমাহীন; তার
সৌন্দর্য আল্লাহ্র কাছে অনেক বেশি শুধুমাত্র তার
ঈমানের কারণে; আর একজন মুসলিমের কাছে
আল্লাহ্র পছন্দের বান্দা হওয়া অপেক্ষা অধিক
গুরুত্বপূর্ণ কী হতে পারে?
দ্বিতীয় হাদীসটিতে বর্ণনা করা হয়েছে জুলাইবিব
নামের একজন সাহাবীকে নিয়ে। তিনি তার
appearance এর জন্য এতটাই কুপরিচিত ছিলেন যে তার
বাবা-মা সম্পর্কে কেউ জানতনা, কেউ তাকে
নিজেদের গোত্রের লোক বলে মানত না, ব্যাপারটা
এতটাই কঠিন ছিল তার জন্য যে মানুষ তাকে যে নাম
দিয়েছিল (জুলাইবিব) তার অর্থ হল ‘বেটে/ত্রুটিপূর্ণ’।
তাকে সবসময় লোকেরা উৎপীড়ন করত। নাম-গোত্রহীন
এই লোকটির অবস্থা এতটাই অসহায় ছিল যে তিনি
লোকদের সাথে কথা বলতে পারতেন না কেননা
তারা সবসময় তাকে খোঁচাতো; তাই তিনি কথা
বললে মহিলাদের সাথেই বলতে পারতেন কেননা
মহিলারা কিছুটা হলেও তার প্রতি সহমর্মিতা
দেখাতো। আমাদের প্রিয় রাসূল (স) সবসময় চেষ্টা
করতেন জুলাইবিবকে অনুপ্রাণিত করার, এই ধারণা
দেয়ার যে সৌন্দর্যই মূখ্য ব্যাপার নয়। তিনি
প্রতিনিয়ত জুলাইবিবকে তাঁর (স) কাছের একজন
সাহাবী ভাবানোর চেষ্টা করতেন। যেহেতু
জুলাইবিবের appearance এর জন্য কেউ তাকে
ভালোবাসতনা, তাই নবী করীম (স) নিজেই একজন
ধন্যাঢ্য আনসারের কাছে গেলেন তার মেয়ের জন্য
প্রস্তাব দিতে। প্রথমদিকে আনসার ভেবেছিল যে
প্রস্তাবটি নবীজীর নিজের জন্য; কিন্তু যখন
জানলেন এটি জুলাইবিবের জন্য, তিনি নারাজ
হলেন। তবুও তিনি তা প্রকাশ করলেন না। নবীজীর (স)
সম্মান রক্ষার্থে তিনি বললেন তিনি এই ব্যাপারটি
তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে জানাবেন। যেহেতু
আনসারটি সমাজের উচ্চ-শ্রেণির ছিলেন, তার মেয়ে
ছিল পরম-সুন্দরী, তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা আশা
করেছিল নবীজী (স) কিংবা প্রথম সারির
সাহাবীদের কেউ হয়ত তার মেয়েকে বিয়ে করবে।
তাই এই প্রস্তাব শোনার পর আনসারের স্ত্রী তাড়
স্বরে চেঁচাতে লাগল। মা-এর চেঁচামেচি শুনে মেয়ে
ছুটে এল। প্রস্তাব শোনার পর মেয়েটি তার বাবা-
মাকে জানালো সে এই প্রস্তাবে রাজি কেননা এই
প্রস্তাব এসেছে আল্লাহ্র রাসূলের (স) এর তরফ
থেকে, তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার সুঃসাহস সে করতে
চায় না- নিশ্চয়ই এর মধ্যেই তার জন্য সকল কল্যাণ
নিহিত। অতঃপর জুলাইবিবের বিয়ে হল পরম সুন্দরী
আনসারের মেয়ের সাথে এবং খলিফা উসমান (র)
বিয়ের সকল ব্যয়ভার নিজে বহন করলেন কেননা
জুলাইবিব যে এতটাই গরীব ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ্ (স) জুলাইবিবকে এতটাই ভালোবাসতেন
যে উ’হুদের যুদ্ধের পর তিনি যখন জুলাইবিবকে খুঁজে
পাচ্ছিলেননা, তখন তিনি সবাইকে বলছিলেন যে
তিনি (স) জুলাইবিবকে খুব miss করছেন। যখন ময়দানে
তিনি জুলাইবিবের লাশ দেখতে পেলেন, দেখলেন
লাশের পাশে ৭জন শত্রু সৈন্যের লাশও পড়ে আছে-
অর্থাৎ জুলাইবিব শহীদ হবার আগে ৭জন শত্রুকে
হত্যা করেছিল। জুলাইবিব গড়নে ছোট-খাটো ছিল
বলে রাসূলুল্লাহ (স) নিজ হাতে জুলাইবিবকে তুলে
নিলেন। নিজ হাতে তার কবর খুড়লেন এবং তাকে
দাফন করলেন। জুলাইবিবের জন্য এর থেকে বড়
পাওয়া আর কী হতে পারে যে আল্লাহ্র রাসূল (স)
নিজ হাতে তাকে দাফন করেছেন, তার জন্য দুয়া
করেছেন?
এই হাদীস দুটো থেকে কেবল রূপ-সংক্রান্ত শিক্ষাই
আমরা পাই না; এই হাদীস দুটোতে আছে আরো কিছু
অমূল্য শিক্ষা।
যারা আমাদের প্রিয় নবীকে (স) নিয়ে অপবাদ
ছড়ায়, যারা তাঁকে নিয়ে মিথ্যাচার রটায়, যারা
তাঁর জীবন থেকে শিক্ষামূলক কিছু পায় না
নোংরা অপবাদ ছাড়া, তারা দেখুক আমাদের নবী
(স) এসব ঠুনকো অপচেষ্টা থেকেও কত বৃহৎ! কী
মহান তাঁর শিক্ষা। আল্লাহ্র মনোনিত নবী হয়েও
কী নিরহংকারী ছিলেন- তাঁর (স) সাহাবীদের
প্রকাশিত-অপ্রকাশিত দুঃখের সময় তিনি কত
চেষ্টা করে গেছেন তাদের উৎসাহিত করার।
যাহ্র (র) রাসূল (স) কে খুব ভালোবাসতেন ।
রাসূলের নূরানী হাতের সংস্পর্শ থেকে বঞ্ছিত
হতে চায়নি বলেই রাসূলুল্লাহ (স) এর জাপটে ধরার
পর খেলাচ্ছলেও fight back করেননি।
আমাদের এই সময় মুসলমান নাম নিয়ে যেখানে
আমরা রাসূলকে (স) সম্মান দেখাতে পারি না,
সেখানে জুলাইবিবের স্ত্রী কিভাবে রাসূলের (স)
সম্মান দেখাতে, তাঁর অনুরোধকে আদেশ মেনে
এবং তাতেই তার কল্যাণ নিশ্চিত ধরে বিয়ে করে
বসল এমন মানুষকে যে কিনা সমাজে ঘৃণিত,
নিন্দিত! আমাদের মধ্যে এত বড় ত্যাগ করার মত
আমরা কেউ আছি কিনা তাতে আমার সন্দেহ নেই,
তবে রাসূলের নির্দেশ মেনে একজন দ্বীনি
ব্যক্তিকে বিয়ে করা এবং বিয়েতে অপচয় না
করার যে শিক্ষা- তাই বা আমরা কতটুকু মানতে
পারছি ??
রাসূলুল্লাহ্ (স)খুব ভালোভাবেই জানতেন সমাজে
জুলাইবিবের অবস্থান সম্পর্কে। তাও তিনি কোন
সাধারণ নারীর জন্য জুলাইবিবের প্রস্তাব দিলেন
না, এমন পরিবারের কাছেই প্রস্তাব দিলেন যেন
জুলাইবিব আর নিজেকে ছোট মনে না করে।
ইসলাম বিয়েতে মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়-
কেবল গুরুত্ব দেয় বলবনা, বরং মেয়েদের মতামত না
থাকলে বিয়েটাই যে হয় না। তাই যারা ‘ইসলামে
নারীর অধিকার নেই’ নামের একই ভাঙ্গা রেকর্ড
দিনের পর দিন বাজিয়ে যায়, তাদের জন্যই তো
আমাদের নবী (স) হাজার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে
গিয়েছেন। আমাদের এই উপলব্ধি আসার জন্য
প্রয়োজন যথেষ্ট জ্ঞান এবং উদার
মনমানসিকতার- ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে ইসলামের
বিরুদ্ধে সকল প্রকার একচোখা চিন্তাচেতনা।
হয়তো এই হাদীস দুটির মধ্যে আরো অনেক শিক্ষা
লুকিয়ে আছে যা আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিমত্তা
থেকে বের করতে পারিনি। তবে মূল যে শিক্ষা এই
হাদীস থেকে পাওয়া যায় তা কিন্তু আমাদের
সমাজের ক্ষুদ্র চিন্তাচেতনাকে ১৪০০ বছর আগেই
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এতদিন পর যখন
ফ্যাশনের দাসত্ব করছি, সেখানে ১৪০০ বছর আগেই
মহান আল্লাহ্পাক মুসলিমদের কেবলমাত্র তাঁর
দাসত্ব করার গৌরবে গৌরবান্বিত করেছেন।
Please, আমরা একটু ভাবি- একটু ভাবি আমাদের
নিজেদের নিয়ে। অনেক তো হল রঙ ফর্সা করার
চেষ্টা, অনেক তো দেখলাম Miss Universe হওয়ার
স্বপ্ন, অনেক তো বেচে খাওয়া হল নিজেদের
সৌন্দর্য। এখন নাহয় একটু ভাবি যা আমাদের রাসূল
(স) আমাদের বলে গিয়েছেন- ঘৃণা করি যারা রূপ
বাদে আর কোনকিছুকেই মূল্য দিতে পারে না, ঘৃণা
করি সেইসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যারা
আমাদের পণ্য বানিয়ে রাখছে, বয়কট করি যেসব
মনমানসিকতাকে যা আমাদের আত্মিক উৎকর্ষতাকে
জঘণ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আল্লাহ্ ছাড়া তো
কেউ আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়নের মাপকাঠি
শেখাতে পারল না। তাহলে কেন আল্লাহ্কে খুশি
করার জন্য আমি উৎসাহী নই? কেন এই মেকী সৌন্দর্য
চর্চা, কেন অন্যকে ছোট করার প্রতিযোগিতা ???
আল্লাহ্ যেন আমার এই লেখা অন্ততপক্ষে একজন
মানুষের চিন্তা-চেতনাকে হলেও বদলাতে সাহায্য
করে, সেই দুয়া করছি। আমীন।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কাছে রূপ অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে মূল্যায়িত হয়ে আসছে-
সেটা মানুষের বেলায় যা, পশু-পাখি ভালোবাসার
ব্যাপারেও তা। তাইতো কালো বিড়াল দেখলে
মানুষ ভয় পায়, অশুভ ভাবে, কাককে পছন্দ করে এমন
মানুষও মিলবে কিনা সন্দেহ। তাহলে দেখুন মানুষের
বেলায় এই ব্যাপারটি কতখানি গুরুত্ববহ করে তুলেছে
মানুষের গড়া সমাজ ! কালো মেয়ে হলে ভালো
জায়গায় কাজ পেতে কষ্ট হয়, অনেক বান্ধবীর মধ্যে
একজন কম সুন্দরী থাকলে সে ভোগে inferiority
complex এ। আর বিয়ে-শাদির বেলাতে তো কথাই
নেই। সবাই সুন্দরী পরী যায়-না থাকুক তার বিদ্যা
কিংবা ভদ্রতা।
এতো বললাম কেবল মেয়েদের কথা যাদের জন্য যুগ
যুগ ধরে উৎপন্ন হচ্ছে ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম, বয়স
বাড়লেও যেন বুড়ো স্বামীর কাছে কিশোরী থাকা
যায়-সে প্রয়াসে wrinkle অপসারণীয় ক্রিম ইত্যাদি।
তবে এখনকার দিনে ছেলেরাও এই নির্মম
নির্যাতনের হাত থেকে ছাড় পাচ্ছে না!! তাই তো
‘ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম’ এর মত পণ্যের প্রসার
ঘটছে !
পুরো বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থাটা এখন এতটাই ঠুনকো!
পশ্চিমা সভ্যতায় গা ভাসিয়ে আমরা এতটাই
বস্তুবাদী হয়ে উঠছি যে অভিব্যক্ত ব্যাপারগুলো
ছাড়া আর কিছু আমাদের মগজে স্থান পায় না-
অবস্থার ভয়াবহতায় তাই আমরা আল্লাহ্কে না দেখে
বিশ্বাস করি না, ফেরেশতাদের না দেখে মানি না,
কুরআনের আয়াতেও নেই আস্থা- পরিণামে আমরা
হয়ে উঠছি ভোতা মানব জাতি- যারা তাদের
দুর্বলতাকে পুঁজি করে পাড়ি দিতে যাচ্ছি অজানা
গন্তব্য- সর্বশিক্তিমানের সাথে দেই পাল্লা!!
রূপের প্রসংগ থেকে ইসলামে চলে আসার পেছনে
একটি কারণ আছে। কিছুদিন আগে একটি শিক্ষামূলক
ভিডিও দেখলাম। ভিডিওটির মূল বক্তব্য ছিল
মানুষের রূপ আল্লাহ্র কাছে মূখ্য নয়- আল্লাহ্র কাছে
বান্দার ঈমান এবং আমলই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে বেশ কয়েকটি হাদীস share করা হয়েছে। তবে
সত্যিকার অর্থে আমি এই হাদিসগুলো থেকে
অনেকগুলো lesson পেয়েছি।
প্রথম হাদীসটি বায়হাকীর। হাদীসটি এরকম যে
রাসূলুল্লাহ্ (স) এর সময়ে যাহ্র (র) নামে একজন
সাহাবী ছিলেন যার মাঝে বাহ্যিক সৌন্দর্য বলতে
কিছুই ছিল না। এই ব্যাপারটি মানুষ অত্যন্ত
বিনম্রভাবে উল্লেখ করত এবং যাহ্র (র)ও নিজেকে
ছোট মনে করতেন। তাই আমাদের প্রিয় নবী (স)
সবসময় চেষ্টা করতেন যেকোন ভাল কাজে যাহ্র (র)
কে উৎসাহিত করার, তাকে সবসময় এই অনুভূতি
প্রদানের যে তিনি (স) যাহ্র (র) কে কত্ত care করেন।
একদিন নবী করীম (স) যাহ্র (র) কে দেখলেন
বাজারে তার পণ্যদ্রব্য বেচতে। তিনি (স)
সাহাবীকে পেছন থেকে জাপটে ধরে মজা করে
বলতে লাগলেন, “কে কিনবে আমার এই দাসটাকে?”
যাহ্র (র) নবীজী (স) এর কন্ঠস্বর শুনে এবং তাঁর
কোমল হাত দেখেই চিনলেন; বুঝলেন আল্লাহ্র রাসূল
(স) তার সাথে মশকরা করছেন। তিনি তাঁকে (স)
বাধা দিলেন না। তবে প্রত্যুত্তরে বললেন, “হে
আল্লাহ্র রাসূল (স), কে আমাকে কিনবে যদিও বা
আমি একজন দাস হতাম?” অর্থাৎ তিনি বোঝালেন
যে তিনি তার চেহারার কারণে মানুষের কাছে
এতটাই অগ্রহণীয় ছিলেন যে মানুষ তাকে দাস
হিসেবেও কিনতে চাইতো না। আমাদের প্রিয় নবী
(স) এতটাই অমায়িক ছিলেন যে তিনি তাঁর হাত-
দুখানা যাহ্র (র) এর কাঁধে রেখে বললেন যে
আল্লাহ্র কাছে যাহ্র (র) এর মূল্য সীমাহীন; তার
সৌন্দর্য আল্লাহ্র কাছে অনেক বেশি শুধুমাত্র তার
ঈমানের কারণে; আর একজন মুসলিমের কাছে
আল্লাহ্র পছন্দের বান্দা হওয়া অপেক্ষা অধিক
গুরুত্বপূর্ণ কী হতে পারে?
দ্বিতীয় হাদীসটিতে বর্ণনা করা হয়েছে জুলাইবিব
নামের একজন সাহাবীকে নিয়ে। তিনি তার
appearance এর জন্য এতটাই কুপরিচিত ছিলেন যে তার
বাবা-মা সম্পর্কে কেউ জানতনা, কেউ তাকে
নিজেদের গোত্রের লোক বলে মানত না, ব্যাপারটা
এতটাই কঠিন ছিল তার জন্য যে মানুষ তাকে যে নাম
দিয়েছিল (জুলাইবিব) তার অর্থ হল ‘বেটে/ত্রুটিপূর্ণ’।
তাকে সবসময় লোকেরা উৎপীড়ন করত। নাম-গোত্রহীন
এই লোকটির অবস্থা এতটাই অসহায় ছিল যে তিনি
লোকদের সাথে কথা বলতে পারতেন না কেননা
তারা সবসময় তাকে খোঁচাতো; তাই তিনি কথা
বললে মহিলাদের সাথেই বলতে পারতেন কেননা
মহিলারা কিছুটা হলেও তার প্রতি সহমর্মিতা
দেখাতো। আমাদের প্রিয় রাসূল (স) সবসময় চেষ্টা
করতেন জুলাইবিবকে অনুপ্রাণিত করার, এই ধারণা
দেয়ার যে সৌন্দর্যই মূখ্য ব্যাপার নয়। তিনি
প্রতিনিয়ত জুলাইবিবকে তাঁর (স) কাছের একজন
সাহাবী ভাবানোর চেষ্টা করতেন। যেহেতু
জুলাইবিবের appearance এর জন্য কেউ তাকে
ভালোবাসতনা, তাই নবী করীম (স) নিজেই একজন
ধন্যাঢ্য আনসারের কাছে গেলেন তার মেয়ের জন্য
প্রস্তাব দিতে। প্রথমদিকে আনসার ভেবেছিল যে
প্রস্তাবটি নবীজীর নিজের জন্য; কিন্তু যখন
জানলেন এটি জুলাইবিবের জন্য, তিনি নারাজ
হলেন। তবুও তিনি তা প্রকাশ করলেন না। নবীজীর (স)
সম্মান রক্ষার্থে তিনি বললেন তিনি এই ব্যাপারটি
তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে জানাবেন। যেহেতু
আনসারটি সমাজের উচ্চ-শ্রেণির ছিলেন, তার মেয়ে
ছিল পরম-সুন্দরী, তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা আশা
করেছিল নবীজী (স) কিংবা প্রথম সারির
সাহাবীদের কেউ হয়ত তার মেয়েকে বিয়ে করবে।
তাই এই প্রস্তাব শোনার পর আনসারের স্ত্রী তাড়
স্বরে চেঁচাতে লাগল। মা-এর চেঁচামেচি শুনে মেয়ে
ছুটে এল। প্রস্তাব শোনার পর মেয়েটি তার বাবা-
মাকে জানালো সে এই প্রস্তাবে রাজি কেননা এই
প্রস্তাব এসেছে আল্লাহ্র রাসূলের (স) এর তরফ
থেকে, তাঁকে ফিরিয়ে দেয়ার সুঃসাহস সে করতে
চায় না- নিশ্চয়ই এর মধ্যেই তার জন্য সকল কল্যাণ
নিহিত। অতঃপর জুলাইবিবের বিয়ে হল পরম সুন্দরী
আনসারের মেয়ের সাথে এবং খলিফা উসমান (র)
বিয়ের সকল ব্যয়ভার নিজে বহন করলেন কেননা
জুলাইবিব যে এতটাই গরীব ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ্ (স) জুলাইবিবকে এতটাই ভালোবাসতেন
যে উ’হুদের যুদ্ধের পর তিনি যখন জুলাইবিবকে খুঁজে
পাচ্ছিলেননা, তখন তিনি সবাইকে বলছিলেন যে
তিনি (স) জুলাইবিবকে খুব miss করছেন। যখন ময়দানে
তিনি জুলাইবিবের লাশ দেখতে পেলেন, দেখলেন
লাশের পাশে ৭জন শত্রু সৈন্যের লাশও পড়ে আছে-
অর্থাৎ জুলাইবিব শহীদ হবার আগে ৭জন শত্রুকে
হত্যা করেছিল। জুলাইবিব গড়নে ছোট-খাটো ছিল
বলে রাসূলুল্লাহ (স) নিজ হাতে জুলাইবিবকে তুলে
নিলেন। নিজ হাতে তার কবর খুড়লেন এবং তাকে
দাফন করলেন। জুলাইবিবের জন্য এর থেকে বড়
পাওয়া আর কী হতে পারে যে আল্লাহ্র রাসূল (স)
নিজ হাতে তাকে দাফন করেছেন, তার জন্য দুয়া
করেছেন?
এই হাদীস দুটো থেকে কেবল রূপ-সংক্রান্ত শিক্ষাই
আমরা পাই না; এই হাদীস দুটোতে আছে আরো কিছু
অমূল্য শিক্ষা।
যারা আমাদের প্রিয় নবীকে (স) নিয়ে অপবাদ
ছড়ায়, যারা তাঁকে নিয়ে মিথ্যাচার রটায়, যারা
তাঁর জীবন থেকে শিক্ষামূলক কিছু পায় না
নোংরা অপবাদ ছাড়া, তারা দেখুক আমাদের নবী
(স) এসব ঠুনকো অপচেষ্টা থেকেও কত বৃহৎ! কী
মহান তাঁর শিক্ষা। আল্লাহ্র মনোনিত নবী হয়েও
কী নিরহংকারী ছিলেন- তাঁর (স) সাহাবীদের
প্রকাশিত-অপ্রকাশিত দুঃখের সময় তিনি কত
চেষ্টা করে গেছেন তাদের উৎসাহিত করার।
যাহ্র (র) রাসূল (স) কে খুব ভালোবাসতেন ।
রাসূলের নূরানী হাতের সংস্পর্শ থেকে বঞ্ছিত
হতে চায়নি বলেই রাসূলুল্লাহ (স) এর জাপটে ধরার
পর খেলাচ্ছলেও fight back করেননি।
আমাদের এই সময় মুসলমান নাম নিয়ে যেখানে
আমরা রাসূলকে (স) সম্মান দেখাতে পারি না,
সেখানে জুলাইবিবের স্ত্রী কিভাবে রাসূলের (স)
সম্মান দেখাতে, তাঁর অনুরোধকে আদেশ মেনে
এবং তাতেই তার কল্যাণ নিশ্চিত ধরে বিয়ে করে
বসল এমন মানুষকে যে কিনা সমাজে ঘৃণিত,
নিন্দিত! আমাদের মধ্যে এত বড় ত্যাগ করার মত
আমরা কেউ আছি কিনা তাতে আমার সন্দেহ নেই,
তবে রাসূলের নির্দেশ মেনে একজন দ্বীনি
ব্যক্তিকে বিয়ে করা এবং বিয়েতে অপচয় না
করার যে শিক্ষা- তাই বা আমরা কতটুকু মানতে
পারছি ??
রাসূলুল্লাহ্ (স)খুব ভালোভাবেই জানতেন সমাজে
জুলাইবিবের অবস্থান সম্পর্কে। তাও তিনি কোন
সাধারণ নারীর জন্য জুলাইবিবের প্রস্তাব দিলেন
না, এমন পরিবারের কাছেই প্রস্তাব দিলেন যেন
জুলাইবিব আর নিজেকে ছোট মনে না করে।
ইসলাম বিয়েতে মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়-
কেবল গুরুত্ব দেয় বলবনা, বরং মেয়েদের মতামত না
থাকলে বিয়েটাই যে হয় না। তাই যারা ‘ইসলামে
নারীর অধিকার নেই’ নামের একই ভাঙ্গা রেকর্ড
দিনের পর দিন বাজিয়ে যায়, তাদের জন্যই তো
আমাদের নবী (স) হাজার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে
গিয়েছেন। আমাদের এই উপলব্ধি আসার জন্য
প্রয়োজন যথেষ্ট জ্ঞান এবং উদার
মনমানসিকতার- ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে ইসলামের
বিরুদ্ধে সকল প্রকার একচোখা চিন্তাচেতনা।
হয়তো এই হাদীস দুটির মধ্যে আরো অনেক শিক্ষা
লুকিয়ে আছে যা আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিমত্তা
থেকে বের করতে পারিনি। তবে মূল যে শিক্ষা এই
হাদীস থেকে পাওয়া যায় তা কিন্তু আমাদের
সমাজের ক্ষুদ্র চিন্তাচেতনাকে ১৪০০ বছর আগেই
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এতদিন পর যখন
ফ্যাশনের দাসত্ব করছি, সেখানে ১৪০০ বছর আগেই
মহান আল্লাহ্পাক মুসলিমদের কেবলমাত্র তাঁর
দাসত্ব করার গৌরবে গৌরবান্বিত করেছেন।
Please, আমরা একটু ভাবি- একটু ভাবি আমাদের
নিজেদের নিয়ে। অনেক তো হল রঙ ফর্সা করার
চেষ্টা, অনেক তো দেখলাম Miss Universe হওয়ার
স্বপ্ন, অনেক তো বেচে খাওয়া হল নিজেদের
সৌন্দর্য। এখন নাহয় একটু ভাবি যা আমাদের রাসূল
(স) আমাদের বলে গিয়েছেন- ঘৃণা করি যারা রূপ
বাদে আর কোনকিছুকেই মূল্য দিতে পারে না, ঘৃণা
করি সেইসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যারা
আমাদের পণ্য বানিয়ে রাখছে, বয়কট করি যেসব
মনমানসিকতাকে যা আমাদের আত্মিক উৎকর্ষতাকে
জঘণ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আল্লাহ্ ছাড়া তো
কেউ আমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়নের মাপকাঠি
শেখাতে পারল না। তাহলে কেন আল্লাহ্কে খুশি
করার জন্য আমি উৎসাহী নই? কেন এই মেকী সৌন্দর্য
চর্চা, কেন অন্যকে ছোট করার প্রতিযোগিতা ???
আল্লাহ্ যেন আমার এই লেখা অন্ততপক্ষে একজন
মানুষের চিন্তা-চেতনাকে হলেও বদলাতে সাহায্য
করে, সেই দুয়া করছি। আমীন।
Subscribe to:
Posts (Atom)