Sunday, 7 February 2016

ভালবাসা দিবসকে না বলুন,

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
লেখক: আ.স.ম শোয়াইব আহমাদ (পিএইচ.ডি) ।
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ভালবাসার পরিচয় :
‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন এর পক্ষ হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’
শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক
কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন,
ﻭَﻟَﺎ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ﻭَﺃَﺣْﺴِﻨُﻮﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ
‘ ‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে
দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্
মুহসিনদের ভালবাসেন।’’ (সূরা আল-বাকারা:১৯৫)
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা
অবলম্বন করা এ দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ
তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও
ভালবাসেন। আল্লাহ বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺑِﻴﻦَ ﻭَﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺘَﻄَﻬِّﺮِﻳﻦَ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারী ও পবিত্রতা
অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’ ’ (সূরা আল-
বাকারা:২২২)
তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ
মুত্তাকীদেরকে খুবই ভালবাসেন। তিনি বলেন,
ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦ
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে
ভালবাসেন।’’ (সূরা আল ইমরান:৭৬)
পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক
কোন কিছুর সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে
না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায়
ছলনা,শঠতা ও স্বার্থপরতা।
ভালবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য সুতোর
টান। কোন দিন কাউকে না দেখেও যে ভালবাসা হয়;
এবং ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের
দূরত্ব পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে
তা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার এক বর্ণনা
থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন,
ﺍﻟﻨﻌﻢ ﺗﻜﻔﺮ ﻭﺍﻟﺮﺣﻢ ﺗﻘﻄﻊ ﻭﻟﻢ ﻧﺮ ﻣﺜﻞ ﺗﻘﺎﺭﺏ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ
‘‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়, কত আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করা হয়, কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত
(শক্তিশালী) কোন কিছু আমি কখনো দেখি
নি।’ ’ (ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ :হাদীস
নং২৬২)
ভালবাসার মানদণ্ড :
কাউকে ভালবাসা এবং কারো সাথে শত্রুতা রাখার
মানদণ্ড হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধুমাত্র
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে
এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। এটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থা।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺃَﺣَﺐَّ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺎﻝِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺍﻟْﺤُﺐُّ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟْﺒُﻐْﺾُ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা
রাখা।’’ (আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১)
ঈমানের পরিচয় দিতে হলে, কাউকে ভালবাসবার
আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ় ভালবাসা
রাখতে হবে। কিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করে। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
ﻭَﻣِﻦْ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﺨِﺬُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻧﺪَﺍﺩًﺍ ﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻬُﻢْ ﻛَﺤُﺐِّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﺷَﺪُّ ﺣُﺒًّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ
‘‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া
অন্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং
আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে;
কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্র প্রতি
ভালবাসায় তারা সুদৃঢ়।’ ’(সূরা আল-বাকারা:১৬৫)
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে
ভালবাসতে হবে, নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ
পাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন,
ﺛَﻠَﺎﺙٌ ﻣَﻦْ ﻛُﻦَّ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﺟَﺪَ ﺣَﻠَﺎﻭَﺓَ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻤَّﺎ
ﺳِﻮَﺍﻫُﻤَﺎ ﻭَﺃَﻥْ ﻳُﺤِﺐَّ ﺍﻟْﻤَﺮْﺀَ ﻟَﺎ ﻳُﺤِﺒُّﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻥْ ﻳَﻜْﺮَﻩَ ﺃَﻥْ ﻳَﻌُﻮﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﻛَﻤَﺎ
ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﺃَﻥْ ﻳُﻘْﺬَﻑَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়।
১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু
থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির
জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফুরীতে ফিরে
যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ
করা।’ ’ (বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং:১৫)
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলত
:
আল্লাহ রাব্বুল ইয্যতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা
পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের
দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা
দেবেন। রাসূলুল্লাহ ( ﷺ ) বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟْﻤُﺘَﺤَﺎﺑُّﻮﻥَ ﺑِﺠَﻠَﺎﻟِﻲ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃُﻇِﻠُّﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﻇِﻠِّﻲ
ﻳَﻮْﻡَ ﻟَﺎ ﻇِﻞَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻇِﻠِّﻲ
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের
নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা
কোথায় ? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ
ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন
আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’ ’ মুসলিম,
কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, হাদিস নং৪৬৫৫)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) আরও বলেন,
ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﺄُﻧَﺎﺳًﺎ ﻣَﺎ ﻫُﻢْ ﺑِﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀَ ﻭَﻟَﺎ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﻳَﻐْﺒِﻄُﻬُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀُ
ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺑِﻤَﻜَﺎﻧِﻬِﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗُﺨْﺒِﺮُﻧَﺎ ﻣَﻦْ ﻫُﻢْ
ﻗَﺎﻝَ ﻫُﻢْ ﻗَﻮْﻡٌ ﺗَﺤَﺎﺑُّﻮﺍ ﺑِﺮُﻭﺡِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﺭْﺣَﺎﻡٍ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝٍ
ﻳَﺘَﻌَﺎﻃَﻮْﻧَﻬَﺎ ﻓَﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﻭُﺟُﻮﻫَﻬُﻢْ ﻟَﻨُﻮﺭٌ ﻭَﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻧُﻮﺭٍ ﻟَﺎ ﻳَﺨَﺎﻓُﻮﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺧَﺎﻑَ
ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺤْﺰَﻧُﻮﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﺰِﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ..
‘‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ
আছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়; কিয়ামতের দিন
আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক
অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবে।
সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে
বলুন, তারা কারা ? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক,
যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে
ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও
নেই, এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেই।
আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা হবে নূরানি
এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীত-
সন্ত্রস্ত থাকবে,সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে না।
এবং যে দিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন
তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না..।’’ (সুনানু আবী দাঊদ,
কিতাবুল বুয়ূ‘, হাদিস নং ৩০৬০)
পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করার উপায় :
ইসলাম বলে, পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য
স্থাপিত না হলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না,
শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এমনকি
জান্নাতও লাভ করা যাবে না। তাই রাসূলুল্লাহ ( ﷺ )
মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য
বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন,
ﻟَﺎ ﺗَﺪْﺧُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺤَﺎﺑُّﻮﺍ ﺃَﻭَﻟَﺎ ﺃَﺩُﻟُّﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ
ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻤُﻮﻩُ ﺗَﺤَﺎﺑَﺒْﺘُﻢْ ﺃَﻓْﺸُﻮﺍ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ..*
‘‘তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ
পর্যন্ত ঈমানদার না হবে, তোমরা ঈমানদার হতে
পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের মধ্যে
ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি
তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না, যা করলে
তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত
হবে ? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ !
(তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে
সালামের প্রচলন কর।’’ (মুসলিম, কিতাবুল ঈমান,

হাদিস নং ৮১)

No comments:

Post a Comment