ইসলামিক "গল্প থেকে শিক্ষা"
* ন্যায়বিচার *
সুলায়মান (আঃ) ন্যায়বিচারক হিসেবে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। সেই কিশোর বয়স থেকেই জ্ঞান আর বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র তেরো। সে সময় তাঁর বাবা বাদশা দাউদ (আঃ)-এর দরবারে এল দুজন লোক। সুবিচার চায় তাঁরা। একজনের নাম ইউহানা। বেশ কতগুলো ভেড়া রয়েছে তার। অপরজনের নাম ইলিয়া। তার রয়েছে শস্যের খেত।
ইলিয়া দাউদ (আঃ)-কে নালিশ করল, ‘হুজুর, আমার একটাই মাত্র খেত। এই খেতের আয় দিয়েই সংসার চলে। কিন্তু, হুজুর, ইউহানার ভেড়াগুলো খেতের সমস্ত ফসল খেয়ে শেষ করে দিয়েছে। এখন আমি বাঁচব কিভাবে? আপনি এর বিচার করুন, হুজুর।’
দাউদ (আঃ) ইউহানাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিহে, ওর কথা কি সত্যি?’
‘জ্বী, হুজুর,’ বলল ইউহানা। দোষ স্বীকার করল সে। দাউদ
(আঃ) খুব সহজেই মিটিয়ে দিতে চাইলেন এই বিবাদ। তিনি রায় দিলেন, ‘ইউহানার ভেড়ার পাল পাবে ইলিয়া। ক্ষতিপূরণ হিসেবে।’
বিচারের রায় শুনে ইউহানার তো মাথায় হাত। ওদিকে ইলিয়ার খুশি ধরে না। সে ফিরে চলল বাড়িতে। তার হাসি গিয়ে ঠেকেছে দু-কানে। কিন্তু ইউহানা বাড়ির পথে চলল ভগ্নহৃদয়ে। বাদশার বিচার মনঃপুত হয়নি তার।
ভেড়ার পাল ছিল তারও একমাত্র সম্বল। এখন উপায়? খাবে কি?
বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে তো না খেয়ে মরতে হবে।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে চলেছে সে। হঠাৎ দেখা হল
সুলায়মান (আঃ)-এর সঙ্গে। সুলায়মান (আঃ) ইলিয়া আর ইউহানা দুজনকেই বিচারের পর যেতে দেখেছেন। একজন খুশি, অন্যজন বিমর্ষ। তাই ইউহানাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
বিচারের রায় কি হল, ভাই?’
ইউহানা খুলে বলল সব কথা।
মনোযোগ দিয়ে সব শুনলেন সুলায়মান (আঃ)। তারপর
ইউহানাকে বললেন, ‘আপনি আবার দরবারে ফিরে যান।
বাবাকে বলুন রায়টা আবার বিবেচনা করতে।’
ইউহানা শুনে ভয় পেয়ে গেল। ‘বল কি? বাদশা যদি রেগে যান?’
‘রাগবেন না। আমি তো চিনি বাবাকে। আপনি নির্ভয়ে যেতে পারেন।’ সুলায়মান (আঃ)-এর কথায় ভরসা পেয়ে ইউহানা আবার গেল
বাদশার কাছে। তাঁকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করল।
‘সত্যি করে বল তো কে পাঠিয়েছে তোমাকে?’
জিজ্ঞেস করলেন দাউদ (আঃ)।
‘হুজুর, আপনার ছেলে সুলোয়মান,’ ভয়ে ভয়ে বলল
ইউহানা।
বাদশা বললেন, ‘ডেকে নিয়ে এসো তাকে।’
ইউহানা বাইরে গিয়ে সুলায়মান (আঃ-কে ডেকে আনল।
দাউদ (আঃ) ছেলের দিকে চেয়ে সামান্য হাসলেন। ‘কি
ব্যাপার, সুলায়মান? একে ফেরত পাঠিয়েছ কেন?’
‘বাবা,’ বললেন সুলায়মান (আঃ), ‘আমার মনে হয় বিচারটা ঠিক হয়নি।’
অবাক হলেন বাদশা। ‘তাই নাকি?’ ছেলের প্রজ্ঞা সম্পর্কে ভালই জানা ছিল বাবার। বললেন, ‘তা তুমিই না হয় করে দাও বিচারটা।’ সুলায়মান (আঃ) তখন ইলিয়াকেও ডেকে আনলেন। তারপর
সকলের সামনে বললেন, ‘ইলিয়া, ইউহানার ভেড়ার পাল এখন আপনার। ভেড়াগুলোর দুধ আর পশম সবই ভোগ করবেন আপনি। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আপনার খেতের শস্য আগের অবস্থায় এলে ইউহানাকে ভেড়াগুলো ফেরত দিতে হবে। ওগুলোর ওপর তখন আপনার আর কোন অধিকার থাকবে না। যার ভেড়া সে ফেরত পেয়ে যাবে।’
বিচারের রায় শুনে বাদী-বিবাদী দুজনেই খুব খুশি হল। আর খুশি হলেন দাউদ (আঃ)। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে
ধরলেন তিনি।
No comments:
Post a Comment