Friday, 8 January 2016

আসুন কুরআন ও সহীহ হাদীস মেনে চলি
কিয়ামতে আলামত খন্ড-4
কিয়ামতের আলামত -4
২৭) ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮْﻡ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ َﺗَﻜْﺜُﺮَ ﺍﻟﺰَّﻟَﺎﺯِﻝُ
বেশী বেশী ভূমিকম্প না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত
প্রতিষ্ঠিত হবেনামুমিন।(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান)। ইমাম
ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ উত্তর, পূর্ব ও
পশ্চিমাঞ্চলের অনেক দেশেই বহু ভূমিকম্পের
আবির্ভাব হয়েছে। বর্তমানে আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকা ও
প্রচার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের খবর শুনতে
পাই। হতে পারে এগুলোই কিয়ামতের আলামত হিসেবে
প্রকাশিত হয়েছে। যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে আমরা
বলবোঃ এসব ভূমিকম্প কিয়ামতের আলামত হিসেবে
প্রকাশিতব্য ভূমিকম্পের প্রাথমিক পর্যায় স্বরূপ| ২০০৫ ইং
সালে শ্রীলংকা,
ইন্দোনেশীয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব
এশীয়ার কয়েকটি দেশে হয়ে যাওয়া সুনামীর ঘটনা
কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি সুস্পষ্ট আলামত।
২৮) ভূমি ধস ও চেহারা বিকৃতির শাস্তি দেখা দিবেঃ
আখেরী যামানায় যখন অশ্লীলতা ও পাপের কাজ
ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে তখন এই উম্মাতের কিছু
লোককে বিভিন্ন প্রকার শাস্তিতে পাকড়াও করা হবে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ﻳَﻜُﻮْﻥُ ﻓِﻰْ ﺁﺧِﺮِ ﻫﺬِﻩِ ﺍﻷُﻣَّﺔِ ﺧَﺴْﻒٌ ﻭ ﻣَﺴْﺦٌ ﻭَﻗَﺬْﻑٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ
ﺍﻟﻠَّﻪ ! ﺃَ ﻧُﻬْﻠَﻚُ ﻭَ ﻓِﻴْﻨَﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤُﻮْﻥَ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻧَﻌْﻢُ , ﺇِﺫﺍ ﻇَﻬَﺮَ ﺍﻟْﺨَﺒَﺚُ
আখেরী যামানায় এই উম্মাতের কিছু লোককে ভূমিধস,
চেহারা পরিবর্তন এবং উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে
শাস্তি দেয়া হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে
আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি
আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা বৃদ্ধি
পাবেমুমিন।(তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবলি ফিতান, ইমাম আলবানী
সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্ সাগীর হাদীছ
নং ৮০১২)।
তিনি আরো বলেনঃ
ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱِ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﻣَﺴْﺦٌ ﻭَﺧَﺴْﻒٌ ﻭَﻗَﺬْﻑٌ
কিয়ামতের পূর্বে ভূমিধস, চেহারা পরিবর্তন এবং উপরে
উঠিয়ে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবেমুমিন।
(ইবনে মাযাহ, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান, সহীহুল জামে আস
সাগীর হাদীছ নং-২৮৫৩)।
আমাদের যামানায় এবং আমাদের পূর্ববর্তী যামানায় পূর্ব ও
পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অনেক ভূমিধসের ঘটনা সংঘটিত
হয়েছে। এটি কঠিন আযাবের পূর্ব সংকেত এবং আল্লাহর
পক্ষ হতে তাঁর বান্দাদের জন্যে ভীতি প্রদর্শন এবং
গুনাহগার ও বিদআতীদের জন্য শাস্তি স্বরূপ| যাতে
লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে ও তাদের প্রভুর দিকে
প্রত্যাবর্তন করে এবং এটাও বিশ্বাস করে যে, কিয়ামত অতি
নিকটবর্তী।
গান-বাজনাতে মত্ত এবং মদপানকারীদেরকে উপরোক্ত
শাস্তি প্রদান করা হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ
ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺄُﻣَّﺔِ ﺧَﺴْﻒٌ ﻭَﻣَﺴْﺦٌ ﻭَﻗَﺬْﻑٌ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺘَﻰ ﺫَﺍﻙَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﺫَﺍ ﻇَﻬَﺮَﺕِ ﺍﻟْﻘَﻴْﻨَﺎﺕُ ﻭَﺍﻟْﻤَﻌَﺎﺯِﻑُ ﻭَﺷُﺮِﺑَﺖِ ﺍﻟْﺨُﻤُﻮﺭُ
এই উম্মাতের মধ্যে ভূমিধসন, চেহারা বিকৃতি এবং উপর
থেকে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার শাস্তি আসবে। জনৈক
সাহাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কখন
এরূপ হবে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃ যখন ব্যাপক হারে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং
মদ্যপানের প্রসার ঘটবেমুমিন।(তিরমিযী, অধ্যায়:
আবওয়াদুল ফিতান। সহীহুল আস সাগীর, হাদীছ নং ৪১১৯)।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
æআমার উম্মাতের একদল লোক মদ্যপানে লিপ্ত হবে।
তবে মদের নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে নামকরণ
করবে। তারা বাদ্যযন্ত্র, বাঁশি বাজানো ও গান-বাজনা নিয়ে
ব্যস্ত থাকবে। তাদের কতককে মাটির নীচে দাবিয়ে
দেয়া হবে এবং অন্য এক দলকে শুকর ও বানরে পরিণত
করা হবেমুমিন।
পাপ কাজ ও নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ
তাআলা বনী ইসরাঈলের এক শ্রেণীর লোকের
চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিবর্তন করে
ধ্বংস করেছিলেন। তবে এই উম্মাতের মাঝে এখনও
চেহারা পরিবর্তনের শাস্তি আসেনি। কিয়ামতের পূর্বে
মানুষ যখন জেনা-ব্যভিচার, মদ্যপান এবং গান-বাজনাসহ নানা
ধরণের পাপের কাজে লিপ্ত হবে তখন এই শাস্তি
অবশ্যই আসবে। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) সহীহ হাদীছে এ ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী
করেছেন। তা কিয়ামতের পূর্বে অবশ্যই বাস্তবায়িত
হবে।
২৯) পরিচিত লোকদেরকেই সালাম দেয়া হবেঃ
কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম আলামত হচ্ছে
মুসলমানেরা কেবল পরিচিত লোকদেরকেই সালাম
দিবে।(মুসনাদে আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ
বলেছেন)। এ বিষয়টি বর্তমান যামানায় সুস্পষ্ট হয়ে দেখা
দিয়েছে। অনেক লোকই পরিচিত ব্যতীত অন্য
কাউকে সালাম দেয়না। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচিত-অপরিচিত সকল
মুসলিমকেই সালাম দিতে বলেছেন। কেননা সালাম বিনিময়
করা মুসলমানদের ভিতরে ভালবাসা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম। তিনি
বলেনঃ তোমরা ঈমানদার না হয়ে জান্নাতে যেতে
পারবেনা। আর একে অপরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার
হতে পারবেনা। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের
সন্ধান দেবনা যা করলে তোমরা একে অপরকে
ভালবাসতে পারবে? তোমরা বেশী করে সালামের
প্রচলন করোমুমিন।(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান)।
৩০)
বেপর্দা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে মহিলারা ইসলামী
পোষাক পরিত্যাগ করে এমন পোষাক পরিধান করবে
যাতে তাদের সতর ঢাকবেনা। তারা মাথার চুল ও সৌন্দর্য্যের
স্থানগুলো প্রকাশ করে ঘর থেকে বের হবে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের
আলামত হচ্ছে মহিলাদের জন্য এমন পোষাক আবিস্কার
হবে যা পরিধান করার পরও মহিলাদেরকে উলঙ্গ মনে
হবেমুমিন।(ইমাম হায়ঝামী বলেন: ইমাম বুখারী এই
হাদীছের বর্ণনাকারীদের থেকে হাদীছ গ্রহণ
করেছেন, মাজমাউজ্ জাওয়ায়েদ, ৭/৩২৭)।অর্থাৎ তাদের
পোষাকগুলো এমন সংকীর্ণ ও আঁট-সাট হবে যে, তা
পরিধান করলেও শরীরের গঠন ও সৌন্দর্যের
স্থানগুলো বাহির থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যাবে।
এই হাদীছটিতে নবুওয়াতের সুস্পষ্ট মু’জেযা রয়েছে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজ থেকে প্রায়
দেড় হাজার বছর পূর্বে যা বলেছেন তা আজ হুবহু
বাস্তবায়িত হয়েছে।
৩১) মুমিনের স্বপ্ন সত্য হবেঃ
কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে আখেরী যামানায়
মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন মিথ্যা হবেনা; বরং ঘুমন্ত অবস্থায় সে যা
স্বপ্নে দেখবে তা সত্যে পরিণত হবে। যার ঈমান যত
মজবুত হবে তার স্বপ্নও তত বেশী সত্য হবে। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ﺇِﺫَﺍ ﺍﻗْﺘَﺮَﺏَ ﺍﻟﺰَّﻣَﺎﻥُ ﻟَﻢْ ﺗَﻜَﺪْ ﺭُﺅْﻳَﺎ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺗَﻜْﺬِﺏُ ﻭَﺃَﺻْﺪَﻗُﻜُﻢْ ﺭُﺅْﻳَﺎ ﺃَﺻْﺪَﻗُﻜُﻢْ
ﺣَﺪِﻳﺜًﺎ ﻭَﺭُﺅْﻳَﺎ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺟُﺰْﺀٌ ﻣِﻦْ ﺧَﻤْﺲٍ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺟُﺰْﺀًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨُّﺒُﻮَّﺓِ ﻭَﺍﻟﺮُّﺅْﻳَﺎ
ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻓَﺮُﺅْﻳَﺎ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤَﺔِ ﺑُﺸْﺮَﻯ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭُﺅْﻳَﺎ ﺗَﺤْﺰِﻳﻦٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﻭَﺭُﺅْﻳَﺎ
ﻣِﻤَّﺎ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺀُ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓَﺈِﻥْ ﺭَﺃَﻯ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻣَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﻓَﻠْﻴَﻘُﻢْ ﻓَﻠْﻴُﺼَﻞِّ ﻭَﻟَﺎ
ﻳُﺤَﺪِّﺙْ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ
যখন কিয়ামত নিকটবর্তী হবে তখন মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন
মিথ্যা হবেনা। যে মুমিন মানুষের সাথে কথা-বার্তায়
সত্যবাদী হবে তাঁর স্বপ্ন বেশী সত্যে পরিণত হবে।
মুমিনের স্বপ্ন নবুওয়াতের পয়তাল্লিশ ভাগের একভাগের
সমান। স্বপ্ন তিন প্রকার। (১) মুমিনের সত্য স্বপ্ন আল্লাহর
পক্ষ হতে সুসংবাদ স্বরূপ| (২) যে সমস্ত স্বপ্ন মনের
ভিতর দুশ্চিন্তা আনয়ন করে তা শয়তানের পক্ষ থেকে।
(৩) আর এক প্রকারের স্বপ্ন অন্তরের কল্পনা মাত্র।
সুতরাং তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে অপছন্দনীয় কিছু
দেখে সে যেন বিছানা থেকে উঠে নামাযে দাঁড়িয়ে
যায় স্বপ্নের কথা কারো কাছে প্রকাশ না করেমুমিন।
(মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুত তা’বীর)।
ইবনে আবি হামজাহ বলেনঃ আখেরী যামানায় মুমিনের
স্বপ্ন সত্য হওয়ার অর্থ এই যে, অধিকাংশ সময় স্বপ্নে যা
দেখেছে তাই বাস্তবে পরিণত হবে। স্বপ্নের ব্যাখ্যার
প্রয়োজন হবেনা। অথচ ইতিপূর্বে তা অস্পষ্ট হওয়ার
কারণে ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতো। ফলে কখনও ব্যাখ্যার
বিপরীত হতোমুমিন।
শেষ যামানায় স্বপ্ন সত্যে পরিণত হওয়ার কারণ এই যে
তখন মুমিন লোকের সংখ্যা কমে যাবে। ফলে সে
সময় মুমিন ব্যক্তি কোন সহযোগী
ও শান্তনা দানকারী খুঁজে পাবেনা। তাই সত্য স্বপ্নের
মাধ্যমে তাকে শান্তনা দেয়া হবে।(ফাতহুল বারী,
১২/৪০৬)।
কোন্ যামানায় মুমিনের স্বপ্নসত্যে পরিণত হবে তার
ব্যাপারে আলেমদের কয়েক ধরণের বক্তব্য
রয়েছেঃ
ক) এটি হবে কিয়ামতের পূর্বে যখন ইল্মে দ্বীন
উঠিয়ে নেয়া হবে, ইসলামী শরীয়তের নাম-নিশানা
মিটে যাবে এবং ফিতনা-ফাসাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হবে।
খ) আখেরী যামানায় যখন মুমিনের সংখ্যা কমে যাবে এবং
কুফর, পাপাচারিতা ও মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে তখন মুমিনের
স্বপ্ন সত্যে পরিণত হবে। মুমিন লোকের সংখ্যা কমে
যাওয়ার কারণে এক সময় তারা একাকীত্ব অনুভব করবে
এবং নিজেদেরকে অসহায় মনে করবে। অন্য একজন
মুমিনের সাথে বসে কথা বলার এবং মনের ভাব বিনিময় করার
মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এহেন কঠিন
পরিস্থিতে স্বপ্নের মাধ্যমে মুনিদেরকে শান্তনা প্রদান
করা হবে।
গ) এটি হবে আখেরী যামানায় ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে
নেমে আসার পর। কারণ খোলাফায়ে রাশেদার যুগের
পর ঈসা (আঃ)এর যামানা হবে সর্বোত্তম যামানা। সে
যুগের মানুষ অত্যন্ত সত্যবাদী হবে। কাজেই তাদের
স্বপ্নও সত্য হবে। (আল্লাহই ভাল জানেন)
৩২) সুন্নাতী আমল সম্পর্কে গাফিলতী করবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের
কেঊ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন বসার
পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়ে নেয়| (মুসলিম, অধ্যায়:
মুসাফিরের সলাত)| কিছু সংখ্যক লোক ব্যতীত কিয়ামতের
পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানেরা এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটির উপর
আমল ছেড়ে দিবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের আলামত হচ্ছে লোকেরা
মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করবে কিন্তু তাতে দু-রাকাত
নামায পড়বেনা।( সহীহ ইবনে খুজায়মা। ইমাম আলবানী
হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সহীহা
হাদীছ নং ৬৪৯)।
৩৩) নতুন মাসের চাঁদ উঠার সময় বড় হয়ে উদিত হবেঃ
মাসের প্রথম দিন আমরা চাঁদকে একেবারে চিকন ও সরু
অবস্থায় উঠতে দেখি। কিন্তু কিয়ামতের নিকটবর্তী
সময়ে চাঁদ প্রথম দিনেই অনেক বড় হয়ে উদিত হবে।
দেখে মনে হবে এটি দুই দিন বা তিন দিনের চাঁদ। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামত নিকটবর্তী
হওয়ার আলামত হচ্ছে, চন্দ্র মোটা হয়ে উদিত হবে। বলা
হবে এটি দুই দিনের চাঁদমুমিন।(তাবরানী, ইমাম আলবানী
হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস
সাগীর হাদীছ নং-৫৭৭৪)।
৩৪) মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবেঃ
কিয়ামতের পূর্বে ব্যাপকভাবে মিথ্যা কথা বলার প্রচলন
ঘটবে। এমনকি এক শ্রেণীর লোক নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করে
মানুষের মাঝে প্রচার করবে। বাস্তবে তাই হয়েছে।
ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের নামে বানোয়াট কিচ্ছা-
কাহিনী ও জাল হাদীছ তৈরী করে এক শ্রেণীর
লোক মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আখেরী যামানায় আমার
উম্মাতের কিছু লোক তোমাদের কাছে এমন কথা
বর্ণনা করবে, যা তোমরাও শুননি এবং তোমাদের বাপ-
দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে।
তারা যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারেমুমিন।
(মুসলিম, মুকাদ্দিমা)।হাদীছের ভাষ্য সত্যে পরিণত
হয়েছে। বর্তমানকালে মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা বলার
অভ্যাস ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি বলা হয়
বর্তমানে একজন সত্যবাদী খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন
তাতেও অতিরঞ্জিত হবেনা বলে মনে হয়। যাচাই-বাছাই না
করেই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার
করতে লোকেরা মোটেও দ্বিধাবোধ করেনা।
প্রচার মাধ্যমগুলো অনবরত মিথ্যা সংবাদ প্রচার করার কারণে
সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যায়।
৩৫) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ﺇِﻥَّ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱِ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﻭَﻛِﺘْﻤَﺎﻥَ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺍﻟْﺤَﻖِِّ
কিয়ামতের পূর্বে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবে এবং
সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবেমুমিন।(মুসনাদে আহমাদ।
আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন)।বর্তমান সমাজে
সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন
ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। অপর পক্ষে সত্যের
সাক্ষী দেয়ার লোক খুব কমই পাওয়া যায়।
৩৬) মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে
যাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ﻣِﻦْ ﺃَﺷْﺮَﺍﻁِ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﺃَﻥْ َﺗَﻜْﺜُﺮَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ ﻭَﻳَﻘِﻞَّ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝُ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟِﺨَﻤْﺴِﻴﻦَ
ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﺍﻟْﻘَﻴِّﻢُ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪ
কিয়ামতের আলামত হচ্ছে, মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং
পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার
দেখা-শুনার জন্যে মাত্র একজন পুরুষ থাকবেমুমিন।
(বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ইলম)।এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলা
হয়েছে যে, কিয়ামতের পূর্বে ফিতনার সময় ব্যাপক
যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে যেহেতু কেবল পুরুষেরাই অংশগ্রহণ
করে থাকে তাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পুরুষেরা
অকাতরে নিহত হবে। ফলে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা
বৃদ্ধি পাবে।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) এই মতটিকে প্রত্যাখ্যান
করে বলেনঃ হাদীছের প্রকাশ্য অর্থ হলো কোন
কারণ ছাড়াই শুধু কিয়ামতের আলামত হিসেবে নারীর সংখ্যা
বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা আখেরী যামানায় পুরুষের
তুলনায় বেশী নারী সৃষ্টি করবেন। বর্তমানেও এ
আলামতটি প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন দেশে
জরিপ করে দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা
অনেক বেশী। ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে।
মোটকথা স্বভাগত ও যুদ্ধ উভয় কারণে পুরুষের সংখ্যা
কমতে পারে।
৩৭) হঠাৎ মৃত্যুর বরণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের
অন্যতম আলামত হচ্ছে হঠাৎ করে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা
বৃদ্ধি পাবেমুমিন।(মাযমাউয্ যাওয়ায়েদ ৭/৩২৫, সহীহুল
জামে আস-সাগীর, হাদীছ নং ৫৭৭৫)।
বর্তমানে এরকম ঘটনা প্রায়ই শুনা যায়। দেখা যায় একজন
মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ। হঠাৎ শুনা যায় সে মৃত্যু বরণ করেছে।
সুতরাং মানুষের উচিৎ মৃত্যু আসার পূর্বেই আল্লাহর কাছে
তাওবা করা এবং সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
৩৮) আরব উপদ্বীপ নদ-নদী এবং গাছপালায় পূর্ণ হয়ে
যাবেঃ
বর্তমানে আরব উপদ্বীপে কোন নদী-নালা নেই।
গাছপালার সংখ্যা খুবই কম। চাষাবাদের উপযোগী ভূমির
পরিমাণ অতি নগণ্য। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আরব
উপদ্বীপের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং তা
গাছপালা ও নদী-নালায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻌُﻮﺩَ ﺃَﺭْﺽُ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻣُﺮُﻭﺟًﺎ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﺭًﺍ
ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা যে পর্যন্ত না
আরব উপদ্বীপ গাছপালা ও নদী-নালায় পূর্ণ হবে।(মুসলিম,
অধ্যায়: কিতাবুয যাকাত)।হাদীছের প্রকাশ্য বর্ণনা থেকে
বুঝা যাচ্ছে যে আরব দেশসমূহে কিয়ামতের পূর্বে
পানির অভাব হবেনা। তাতে প্রচুর পরিমাণ নদী প্রবাহিত
হবে। ফলে গাছ-পালা ও নানা উদ্ভিদ উৎপন্ন হবে এবং বন-জঙ্গলে ভরে যাবে।
হাদীস পড়ুন সুন্দর জীবন গড়ুন 
পেইজ টিতে লাইক দিয়ে এক্টিভেট থাকুন আমাদের পেইজটি সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো,

No comments:

Post a Comment